বিশ্ববাজারে ফের বাড়ল তেলের দাম: স্বল্পমেয়াদে ঘাটতির আশঙ্কা, দীর্ঘমেয়াদে ভিন্ন বার্তা

আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে জ্বালানি তেলের দাম। চাহিদা ও জোগানের অমিলের কারণে শুক্রবার ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ২.৫% বেড়ে ৭০ ডলার ছাড়িয়েছে, এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডব্লিউটিআই তেলের দামও প্রায় ৩% বৃদ্ধি পেয়েছে।

মূলত দুটি কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রথমত, আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (IEA) জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে তেলের চাহিদা পূর্বাভাসের চেয়েও অনেক বেশি। গ্রীষ্মকালীন ভ্রমণ মৌসুম এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে অতিরিক্ত জ্বালানির ব্যবহার বাড়ায় পরিশোধনাগারগুলো এখন পূর্ণ সক্ষমতায় চলছে। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রে টানা ১১ সপ্তাহ ধরে তেল ও গ্যাসের অনুসন্ধান কার্যক্রম (রিগ) কমেছে, যা উৎপাদনে ঘাটতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

প্রাইস ফিউচারস গ্রুপের বিশ্লেষক ফিল ফ্লিনের মতে, “বাজারে যে সরবরাহে টান পড়েছে, তা এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।”

চাহিদার এই চাপ সামলাতে ওপেক প্লাস জোটভুক্ত দেশগুলো উৎপাদন বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশেষ করে রাশিয়া জানিয়েছে, তারা আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে অতিরিক্ত উৎপাদনের ঘাটতি পূরণ করবে। অন্যদিকে, সৌদি আরব আগামী আগস্টে চীনে ৫১ মিলিয়ন ব্যারেল তেল রপ্তানির পরিকল্পনা করেছে, যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

স্বল্পমেয়াদে দাম বাড়লেও দীর্ঘমেয়াদে পরিস্থিতি উল্টে যেতে পারে। IEA একদিকে যেমন চাহিদা বৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে, তেমনই সরবরাহ বাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। এর ফলে ভবিষ্যতে বাজারে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি তেল জমা হতে পারে।

ওপেক প্লাস নিজেও তাদের ২০২৫ সালের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২৬ থেকে ২০২৯ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে তেলের চাহিদা কমতে পারে। এর প্রধান কারণ হিসেবে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধীরগতিকে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর সাথে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক উত্তেজনা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়াকে নিয়ে বড় কোনো ঘোষণা দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করছে। এসব ঘটনাও তেলের বাজারকে প্রভাবিত করছে।

সব মিলিয়ে, বিশ্লেষকরা মনে করছেন, স্বল্পমেয়াদে তেলের এই মূল্যবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনাই বেশি। তবে দীর্ঘমেয়াদী বাজার অনেকটাই নির্ভর করছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর।

Share This Article
Leave a Comment