রিটার্ন না দেওয়া ১ কোটি করদাতাকে টার্গেট, কর ফাঁকি রোধে কঠোর অবস্থানে এনবিআর

যাদের ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) আছে, কিন্তু আয়কর রিটার্ন জমা দেন না বা দিলেও ঠিকমতো কর পরিশোধ করেন না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। দেশে এমন প্রায় এক কোটি করদাতাকে চিহ্নিত করে তাদের থেকে কর আদায়ে আয়কর কর্মকর্তাদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।

সোমবার (১৪ জুলাই) রাজধানীর রাজস্ব ভবনে আয়োজিত এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যালোচনা সভায় তিনি এই কড়া বার্তা দেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, দেশে বর্তমানে প্রায় ৭২ লাখ টিআইএনধারী ব্যক্তি আয়কর রিটার্ন জমা দিচ্ছেন না। এছাড়া আরও ৩০ লাখ করদাতা রিটার্ন জমা দিলেও সরকারের প্রাপ্য কর পরিশোধ করছেন না। এই বিশাল সংখ্যক করদাতাকে আইনের আওতায় এনে রাজস্ব আদায় বাড়ানোই এখন এনবিআরের প্রধান লক্ষ্য।

মো. আবদুর রহমান খান বলেন, “২০২৫-২৬ অর্থবছরে এই এক কোটি করদাতাকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী কর আদায় নিশ্চিত করতে হবে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বকেয়া রাজস্ব আদায়ে আরও সক্রিয় হতে এবং এ ক্ষেত্রে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার নির্দেশ দেন তিনি।

করদাতাদের হয়রানি কমাতে চলতি জুলাই মাসের মধ্যেই সকল আয়কর নথি নির্ধারিত কর অঞ্চলে স্থানান্তরের কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে এবং কোনো রকম মানবিক হস্তক্ষেপ ছাড়াই নিরীক্ষার জন্য করদাতা নির্বাচন করা হবে। চেয়ারম্যান বলেন, “নিরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য কর আদায় নয়, বরং কর ফাঁকি রোধ করে একটি সুস্থ কর সংস্কৃতি গড়ে তোলা।”

যারা এখনও রিটার্ন দাখিলের বাইরে রয়েছেন, তাদের উৎসাহিত করতে এবং রিটার্ন দাখিল নিশ্চিত করতে জনবলের সর্বোচ্চ ব্যবহারের নির্দেশ দেন তিনি।

সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান আয়কর বিভাগের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আয় ও সম্পদের বৈষম্য কমানো এবং রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য আয়কর আদায়ের হার বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। অথচ আয়কর বিভাগ এ লক্ষ্য পূরণে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।” তিনি উল্লেখ করেন, সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে মোট রাজস্বে আয়করের অংশ না বেড়ে বরং কিছুটা কমেছে।

এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি নতুন করদাতা খুঁজে বের করতে জরিপ ও সরেজমিন কার্যক্রম আরও জোরদার করার নির্দেশ দেন।

সভায় এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন কর অঞ্চলের কমিশনার এবং সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) ও আয়কর গোয়েন্দা ইউনিটের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Share This Article
Leave a Comment