তানভীর আহমেদ:- কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে এক আনন্দঘন পারিবারিক ভ্রমণ মুহূর্তেই পরিণত হলো এক বুকফাটা ট্র্যাজেডিতে। আকস্মিক নৌকাডুবিতে প্রাণ হারিয়েছে দুই বোন—বড় বোন কাশ্মীরা রহমান নীলা (১৭) এবং ছোট বোন ফারিয়া রহমান নীহা (৯)। শুক্রবারের এই দুর্ঘটনার পর ১৯ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকার পর শনিবার দুপুরে ছোট বোন নীহার মরদেহ উদ্ধার করা হলে এলাকায় নেমে আসে শোকের মাতম।
ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকেলে পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদী ইউনিয়নের দক্ষিণ চরটেকি বেড়িবাঁধ এলাকায়। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার জালুয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রহমান তার স্ত্রী নীপা আক্তার ও দুই মেয়েকে নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে গড়ে ওঠা পর্যটন স্থানটিতে বেড়াতে যান। ঘোরাঘুরির এক পর্যায়ে তারা একটি ডিঙ্গি নৌকায় করে নদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বের হন। কিন্তু কে জানতো, এই আনন্দ ভ্রমণই তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে! কিছুক্ষণের মধ্যেই আকস্মিকভাবে তাদের নৌকাটি ডুবে যায়।
স্থানীয়রা দ্রুত ছুটে এসে আবদুর রহমান ও তার স্ত্রী নীপা আক্তারকে জীবিত উদ্ধার করতে পারলেও বড় মেয়ে নীলাকে উদ্ধার করা হয় মৃত অবস্থায়। এসময় স্রোতের টানে হারিয়ে যায় ছোট মেয়ে ফারিয়া।
খবর পেয়ে কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চেষ্টা করেও ফারিয়ার সন্ধান মেলেনি। পরদিন শনিবার সকাল থেকে পুনরায় অভিযান শুরু হয়। অবশেষে দুপুর ১২টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে ফারিয়ার নিথর দেহ ভেসে উঠলে ডুবুরিরা তা উদ্ধার করে।
নিহত কাশ্মীরা রহমান নীলা গুরুদয়াল সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের এবং ফারিয়া রহমান নীহা কটিয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। দুই বোনের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে তাদের পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের অফিসার আব্দুল্লাহ খালিদ জানান, খবর পাওয়ার সাথে সাথেই তারা উদ্ধারকাজ শুরু করেন এবং ১৯ ঘণ্টা পর শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হন। পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বিল্লাল হোসেন দুই বোনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
যে বেড়িবাঁধটি ছিল স্থানীয়দের কাছে নির্মল আনন্দের উৎস, দুই বোনের মৃত্যুতে সেই স্থানটি এখন পরিণত হয়েছে এক গভীর বিষাদের প্রতিচ্ছবিতে।