সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে ইরান ও ইসরায়েল। তবে ইরানের নজিরবিহীন ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরেও ইসরায়েলে প্রাণহানির সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত। এর পেছনের মূল কারণ কোনো দৈবঘটনা নয়, বরং দেশটির শক্তিশালী প্রযুক্তি, সুনির্দিষ্ট কৌশলগত পরিকল্পনা এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় গড়ে তোলা এক বিশেষ ব্যবস্থা।
যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইসরায়েল বহু বছর ধরে তাদের বেসামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়েছে। প্রতিটি নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রেই বাধ্যতামূলকভাবে রাখা হয় ‘মামাদ’ বা বোমাপ্রতিরোধী নিরাপদ কক্ষ। এর পাশাপাশি রয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ‘হোম ফ্রন্ট কমান্ড’ পরিচালিত অত্যাধুনিক সতর্কীকরণ ব্যবস্থা। হামলার আভাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সাইরেন এবং মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে দেশজুড়ে সতর্কবার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়, যা নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে সাহায্য করে।
এই ব্যবস্থার কার্যকারিতা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায়। তেল আবিবের একটি বহুতল ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলেও বাসিন্দারা আগে থেকেই বোমাপ্রতিরোধী কক্ষে আশ্রয় নেওয়ায় শত শত মানুষ অক্ষত ছিলেন। একইভাবে, রামাত গান এলাকায় একটি পুরনো ভবনের বাসিন্দারা বেজমেন্টে আশ্রয় নিয়ে নিজেদের জীবন রক্ষা করেন।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে ‘হোম ফ্রন্ট কমান্ড’ অ্যাপ। ইরান থেকে কোনো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে পৌঁছাতে সাধারণত ১০-১২ মিনিট সময় লাগে। উৎক্ষেপণের কয়েক মিনিটের মধ্যেই এই অ্যাপটি সম্ভাব্য হামলার বিষয়টি শনাক্ত করে নাগরিকদের মোবাইলে সতর্কবার্তা পাঠিয়ে দেয়। ফলে সাধারণ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সময়টুকু পান। এই ব্যবস্থার কারণেই বেসামরিক নাগরিকদের সবসময় আশ্রয়কেন্দ্রের কাছাকাছি থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সুতরাং, সামরিক সক্ষমতার পাশাপাশি বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়াই ইরানের ব্যাপক হামলাতেও ইসরায়েলের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রিত রাখার মূল রহস্য। প্রযুক্তি ও পরিকল্পনার এই যুগলবন্দীই দেশটির জনগণের জন্য প্রধান রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করছে।