ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: পাল্টা হামলায় বিধ্বস্ত ইসরায়েলের শহর

তেল শোধনাগার থেকে পারমাণবিক স্থাপনা, বন্দর থেকে প্রতিরক্ষা দপ্তর—ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান ছায়া যুদ্ধ এখন সরাসরি সংঘাতে রূপ নিয়েছে। দুই দেশের পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে, ইরানের নজিরবিহীন হামলায় ইসরায়েলের তেল আবিব, জেরুজালেম ও হাইফার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ফুটে উঠেছে।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বহু ভবন। রাতভর সাইরেনের শব্দ আর বিস্ফোরণের আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে লাখো মানুষ। ধসে পড়া ভবনের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারে মরিয়া হয়ে কাজ করছেন উদ্ধারকর্মীরা। আহতদের ভিড়ে দেশটির হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগে বিপর্যয় নেমে এসেছে।

একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণকে ‘বিশাল’ বলে উল্লেখ করে জানান, উদ্ধার অভিযান পুরোদমে চলছে এবং নিখোঁজদের উদ্ধারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ এই হামলাকে ‘ভীষণ দুঃখজনক ও কঠিন সকাল’ বলে অভিহিত করে ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

ইরানের মূল লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী হাইফা। এই বন্দরটি ইসরায়েলের অর্থনীতি ও বাণিজ্যের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হাইফা বন্দরের তেল ডিপো এবং রাসায়নিক টার্মিনাল সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তেহরানের পরিকল্পনা ছিল বন্দরের অ্যামোনিয়া ডিপোতে আঘাত হানা, যা সফল হলে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারতো।

অন্যদিকে, বসে নেই ইসরায়েলও। ইরানের তেল ডিপো, শাহরান শহরের জ্বালানি স্থাপনা এবং কয়েকটি পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে তেল আবিব। ইরানের দাবি, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইসরায়েলের ছোড়া বেশিরভাগ ড্রোন ও ক্রুজ মিসাইল প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে।

এই সংঘাত এখন আর দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা প্রথমবারের মতো ইরানের সঙ্গে জোট বেঁধে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে। তাদের মুখপাত্র জানান, “নৃশংস ইহুদি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে” তারা ইরানের পাশে আছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই বলে দাবি করলেও ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আক্রান্ত হলে এমন জবাব দেওয়া হবে যা আগে কেউ দেখেনি।

এই উত্তেজনার মধ্যে জর্ডান ও সিরিয়া তাদের আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করেছে। রাশিয়া ও চীনের মতো বিশ্বশক্তিগুলো উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। সব মিলিয়ে, মধ্যপ্রাচ্যের আকাশজুড়ে এখন যুদ্ধের ঘন কালো মেঘ, যা যেকোনো মুহূর্তে আরও বড় সংঘাতের দিকে মোড় নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

Share This Article
Leave a Comment