গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাটকীয়ভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রদলের দুই শীর্ষ নেতা। শুক্রবার (১১ জুলাই) রাত ৩টার দিকে নিজেদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে হুবহু একই পোস্ট দিয়ে তারা রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানান।
পদত্যাগকারী এই দুই নেতা হলেন—গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জাহিমুর রহমান জিসান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক রহমান ঈসান।
‘জুলাই বিপ্লবের’ আদর্শের সাথে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ‘সাংঘর্ষিক’ উল্লেখ করে তারা তাদের ফেসবুক পোস্টে লেখেন:
“আমরা স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে এবং ব্যক্তিগত কারণে দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করছি। আজ থেকে নিজেদের অরাজনৈতিক মানুষে পরিণত করলাম। ব্যক্তিগতভাবে আমরা যে আদর্শ চেয়েছিলাম, ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে সেই আদর্শের সাথে বর্তমান পরিস্থিতি সাংঘর্ষিক। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামীতে সেটার কতটুকু সফলতা থাকে, সেটাতেও প্রশ্নবোধক চিহ্ন। যে আদর্শ নিয়ে জুলাই বিপ্লব হয়েছিল, সেই শহীদের রক্তের সঙ্গে কোনো বেঈমানি আমরা মেনে নিতে পারব না, সম্ভবও না। দেশের জন্য কাজ করতে কোনো দলীয় পদবীর প্রয়োজন নেই, দেশকে যে ভালোবাসে সেই সন্তান। দেশের প্রয়োজনে সদা বলীয়ান। সাধারণ জনতার কাতারে থেকেই দেশের ভালো দেখতে চাই এবং প্রত্যাশা করি পরবর্তীতে দেশের শাসন ব্যবস্থা যার হাতেই উঠুক তারা যেন নিজেদের দেশের শাসক না, সেবক মনে করে।”
এ বিষয়ে জাহিমুর রহমান জিসান গণমাধ্যমকে জানান, “ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণেই আমি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছি।”
অন্যদিকে, ইশতিয়াক রহমান ঈসান বলেন, “ফেসবুকে আমিই প্রথম পোস্ট দেই, যা দেখে জিসানও একই পোস্ট দেন। জুলাই বিপ্লবের কাছে আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ হয়নি। তাই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছি। দ্রুতই আমরা অফিশিয়ালি পদত্যাগপত্র জমা দেব।”
দুই নেতার এমন আকস্মিক পদত্যাগকে ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাফি। তিনি বলেন, “ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী। আমরা এখনও কোনো পদত্যাগপত্র পাইনি। তারা কোনো সংগঠনের চাপের মুখে এমন সিদ্ধান্ত নিলেন কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। বিষয়টি দলের হাইকমান্ডকে জানানো হবে এবং তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ৫ সদস্য বিশিষ্ট গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের এই কমিটি গঠন করা হয়েছিল। মাত্র কয়েক মাসের মাথায় দুজন শীর্ষ নেতার পদত্যাগের ঘটনায় সংগঠনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।