ইরানে ইন্টারনেট বন্ধ করলো সরকার, পাল্টা চালু করলেন ইলন মাস্ক!

 

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের আবহে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা সক্রিয় করাকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে নতুন জল্পনা।

সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এক নতুন এবং অভাবনীয় মাত্রা পেয়েছে। ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একক সমর্থনের আবহে যখন মধ্যপ্রাচ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে, ঠিক তখনই ইরান সরকার রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন এলাকায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এই পদক্ষেপের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মার্কিন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও ধনকুবের ইলন মাস্ক ইরানে তার স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা ‘স্টারলিংক’ চালু করে দিয়েছেন। এই নাটকীয় ঘটনা বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এবং প্রশ্ন উঠেছে—তবে কি প্রযুক্তির ময়দানে নতুন কোনো সংঘাত শুরু হতে চলেছে?

সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ইসরায়েলি হামলায় ইরানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর তেহরান সরকার ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলার পর সম্ভাব্য গণবিক্ষোভ ও অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ঠেকাতে এবং তথ্যপ্রবাহ সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেই ইরান সরকার এই পদক্ষেপ নেয়। উদ্দেশ্য ছিল, হামলার ক্ষয়ক্ষতির খবর এবং সরকারের বিরুদ্ধে যেকোনো প্রতিবাদী স্বর যেন দেশের বাইরে যেতে না পারে।

ইরান সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিপরীতে দাঁড়িয়ে ইলন মাস্ক তার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্স-এর অধীনে থাকা স্টারলিংক ইন্টারনেট পরিষেবা ইরানে সক্রিয় করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্স’-এ এক পোস্টে তিনি লেখেন, “The beams are on,” যার মাধ্যমে তিনি ইরানে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট চালু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

স্টারলিংক হলো এমন একটি প্রযুক্তি যা পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে থাকা হাজার হাজার স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে। যেহেতু এটি কোনো দেশের স্থানীয় অবকাঠামোর ওপর নির্ভরশীল নয়, তাই সরকার চাইলেও সহজে এই সংযোগ বন্ধ করতে পারে না।

ইলন মাস্কের এই পদক্ষেপকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখতে নারাজ আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, এটি একটি সুপরিকল্পিত উদ্যোগ হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র যেখানে প্রকাশ্যে ইসরায়েলকে সমর্থন দিচ্ছে, সেখানে একজন মার্কিন ধনকুবেরের প্রতিষ্ঠান এমন একটি পদক্ষেপ নিলো যা সরাসরি ইরানের ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এর মাধ্যমে ইরানের সাধারণ মানুষ বহির্বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুযোগ পাবে, যা সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

এর আগে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও ইলন মাস্ক ইউক্রেনকে স্টারলিংক পরিষেবা দিয়ে সহায়তা করেছিলেন। সেই সময় এই প্রযুক্তি ইউক্রেনের সামরিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সচল রাখতে এবং রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ইরানের ক্ষেত্রেও একই প্রযুক্তির ব্যবহার নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এই ঘটনা প্রমাণ করে যে আধুনিক যুদ্ধ কেবল রণাঙ্গনে সীমাবদ্ধ নেই, বরং সাইবারস্পেস এবং তথ্যপ্রবাহের নিয়ন্ত্রণও এখন যুদ্ধের একটি বড় অংশ। ইরান সরকার যেখানে তথ্য চাপা দিতে চাইছে, মাস্কের প্রযুক্তি সেখানে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে চাইছে।

এখন পর্যন্ত ইরান সরকারের পক্ষ থেকে স্টারলিংক চালুর বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে এটি স্পষ্ট যে, এই প্রযুক্তিগত লড়াই ইরান-ইসরায়েল সংঘাতকে আরও জটিল করে তুলেছে। একদিকে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে ইরানকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে, তখন ইলন মাস্কের এই পদক্ষেপ সেই লড়াইকে প্রযুক্তির ময়দানে নিয়ে এসেছে, যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব গোটা বিশ্বের ওপর পড়তে পারে।

Share This Article
Leave a Comment